1. »
  2. আবহাওয়া

যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলা ভাষা শিক্ষণে ১০ হাজার ডলার ব্যয় হবে

সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৭:২৩ পিএম | আপডেট: সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৭:২৩ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলা ভাষা শিক্ষণে ১০ হাজার ডলার ব্যয় হবে

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তানদের মধ্যে বাংলা ভাষার অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তাদের বাংলা ভাষা শেখানোসহ তা ধারণ ও লালনে উৎসাহিত করতে ১০ হাজার ডলার ব্যয় করা হবে। 
 
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। কথাগুলো বলছিলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ।

আমাদের এই ডলার অনুদান হিসেবে দিয়েছে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ইউএসএ চ্যাপটার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগবৈকল্য বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা হাকিম আরিফ বলেন, বিশ্বে প্রায় সাত হাজার মাতৃভাষা রয়েছে। অনেক ভাষা মরে যাচ্ছে। 

কিন্তু বিশ্বে যত দিন বাঙালি থাকবে, বাংলাদেশি থাকবে, বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন বাংলা ভাষা মরবে না। বর্তমানে পৃথিবীর ১৭৫টি দেশে দেড় কোটি অভিবাসী বসবাস করেন। 

প্রথম প্রজন্মে বাঙালি বাংলা ভাষায় পঠন, লিখন চালু রাখেন। বিপত্তিটা শুরু হয় দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে। তাঁরা কথা বোঝেন, কিন্তু ঠিকমতো বলতে পারেন না। বাংলায় পড়তে ও লিখতেও জানেন না। 

এভাবে চললে প্রবাসে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে তৃতীয় প্রজন্ম থেকেই বাংলা ভাষা বিলীন হয়ে যাবে।

জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজার হলরুমে অভিবাসী বাঙালি নাগরিক সমাজ যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক গবেষক নুরুল বাতেন। 

লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নিউইয়র্কে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেল মো : নাজমুল হুদা। 

আলোচক হিসেবে ছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির সিনিয়র প্রোগ্রামিং লাইব্রেরিয়ান সেলিনা শারমিন।

অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল মো : নাজমুল হুদা বলেন, ‘নিউইয়র্কে বাঙালি জনসমাজে এটাই আমার প্রথম অনুষ্ঠান। 

এখানকার অভিবাসীদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি দরদ দেখে আমি অভিভূত। দ্বিতীয় প্রজন্মের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব আমরা।’

গবেষক নুরুল বাতেন বলেন, ‘কানাডার দুজন অভিবাসীর উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রস্তাবের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো বাংলাদেশের শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। 

এর উদ্যোক্তা ছিলেন কানাডার অধিবাসী রফিকুল ইসলাম। তিনি ১৯৯৫ সালে নিউইয়র্কে এসে দেখেছিলেন, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জাতিসংঘের সামনে আন্তর্জাতিকভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়। 

সেখান থেকে তিনি উৎসাহ পেয়েছেন বলে নানান বক্তব্যে বলেছেন। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা এখানে উপস্থিত আছেন। 

তাঁকে বিশেষভাবে অনুরোধ করব, দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তানের জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট যে উদ্যোগ গ্রহণ করবে, তার সঙ্গে সার্বিকভাবে থাকার জন্য।’

অনুষ্ঠানে বিশ্বজিত সাহা বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছর জাতিসংঘের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার করে ফুল দেওয়া হয়, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের পর সবচেয়ে বড় বইমেলার আয়োজন করা হয় এখানে। 

আগামী প্রজন্মের শিশু-কিশোরেরা নিজেরা নিজেদের অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলায়। সবকিছুই সম্ভব হয়েছে উত্তর আমেরিকার অভিবাসীদের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও সহায়তায়। 

তাই এই গৌরবের কৃতিত্ব সবার। বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ আমন্ত্রিত ৫০ জন নানা পেশাজীবী অভিবাসী উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধান অতিথিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন কবি সামস আল মমিন, কবি ফকির ইলিয়াছ, সাংবাদিক সঞ্জীবন কুমার সরকার ও রিমন ইসলাম, অ্যাকটিভিস্ট হাবিব রহমান হারুন।

তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে হাকিম আরিফ বলেন, ‘আমরা ইউনেসকোর মাধ্যমে প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি অনুবাদ কেন্দ্র চালু আছে। বাংলা ও ইংরেজিতে পাঁচ খণ্ডে মাতৃভাষা বিশ্বকোষ প্রকাশিত হবে। বহুভাষিক পকেট অভিধান প্রকাশিত হচ্ছে। ৫টি বইয়ে ১৫টি ভাষা অন্তর্ভুক্ত হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, প্রবাসী প্রতিটি নাগরিক বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি, তাই সবাইকে বাংলা সংস্কৃতির প্রসারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পাশাপাশি নববর্ষ উদ্‌যাপন, বইমেলা, লালন-রবীন্দ্র-নজরুল বিভিন্ন সম্মেলনে দ্বিতীয় প্রজন্মকে ব্যাপক হারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

একটি জাতির ভাষা আগে মরে এবং সব শেষে বিলীন হয় খাদ্যাভ্যাস।

দ্বিতীয় পর্বে কিশোরগঞ্জের সন্তান হাকিম আরিফ ও পত্নী অধ্যক্ষ শিরীন সুলতানাকে ফুলের তোড়ায় শুভেচ্ছা জানান কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি মো : আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো : ফজলুল হকসহ কিশোরগঞ্জের অনেক গুণীজন।