দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়ে দিয়েছে সরকার : রিজভী
সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০২:৪৫ পিএম | আপডেট: সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০২:৪৫ পিএম
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়ে দিয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশের সমগ্র অর্থনীতিকে ভয়াবহ এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে আওয়ামী ডামি সরকার। গণতন্ত্রহীনতা, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, মূল্যস্ফীতি, নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার নজিরবিহীন দরপতনে জনগণ আতঙ্কিত।
রিজভী আরও বলেন বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়ে দিয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ ঋণ শোধ করতে ট্যাক্স-ভ্যাট-কর খাজনার পরিধি-আওতা বাড়িয়ে জনগণের গলায় গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করার অবস্থায় নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশী-বিদেশী ঋণের পরিমান বাংলাদেশের দু’টি অর্থ বছরের বাজেটেরও বেশি। যে শিশু ভূমিষ্ট হচ্ছে আজ তার মাথায়ও প্রায় লাখ টাকার বেশি ঋণের বোঝা।
তিনি বলেন, ঋণের টাকায় কানাডার বেগম পাড়া, আমেরিকায় বিলাস বহুল বাড়ি-গাড়ি-ব্যবসা, দুবাই সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ তিন মহাদেশে সম্পদের পাহাড় গড়া হয়েছে। সুইস ব্যাংকে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ কার কার নতুন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে সেটিও অনবগত নয় অনেকে। আওয়ামী লুটেরাদের দেশে বহুতল বাড়ি, বিলাসী গাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য, জীবন যাপনে জৌলুষ উপচে পড়ছে। আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ ফতুর হয়ে খেয়ে না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। তিন বেলা খাওয়ার সাধ্য কেড়ে নিয়েছে লুটেরা সরকার। গরিবের বাঁচা-মরার সাথে জড়িত প্রতিটি জরুরি পণ্যের দাম উল্কার গতিতে বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষের মাছ, গোস্ত, ডিম খাওয়া বন্ধ হয়েছে, নতুন করে গরিব হয়েছে কয়েক কোটি মানুষ। অনাহার-অর্ধাহারের বৃত্তে আটকে আছে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। মানুষ সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে, এখন ঋণ করে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বত্রই অস্বস্তি-অস্থিরতা। দেশী-বিদেশী শ্বাসরুদ্ধকর ঋণের তলে ডুবিয়ে দেশকে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার সাথে তুলনা করা আওয়ামী লীগের ধাপ্পাবাজ মন্ত্রীরা এখন ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারের বিদেশী ঋণের পরিমাণ সাত হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় সাত লাখ ৯৭ হাজার আট শ’ কোটি টাকা। এর বাইরে বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ আট লাখ ১৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে ডামি সরকারের ঋণ ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। গত সাত বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১৭৯ শতাংশ। বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধ মাত্র শুরু হয়েছে, এখনই ডলারে কুলাচ্ছে না। কারণ ডলার তলানির দিকে ক্রমধাবমান।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এই বিপুল অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ ডামি সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। জ্বালানি, বিদ্যুৎ সঙ্কট, ডলারের বিপরীতে গত কয়েক মাস যাবত টাকার মানের ক্রমাগত পতন এবং রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেশের অর্থনৈতিক গতিপথ নিয়ে জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। মুদ্রামান হারাবার সাথে সাথে ডলার দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে দেশী মার্কেটে। রিজার্ভ প্রায় নিঃশেষের পথে। দেশের সম্পদ লুটপাটের দরজা খুলে দিয়েছে দখলদার সরকার। দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদদের অভিমতও তাই। অযোগ্য লুটেরা সরকার ক্ষমতায় থাকলে ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে।
‘আপনারা জানেন, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প অন্য দেশের হাতে তুলে দিতে গভীর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী ডামি সরকার গত চার দিন আগে এক প্রজ্ঞাপনে তৈরি পোশাকসহ রফতানিমুখী ৪৩টি শিল্প খাতে প্রণোদনা কমিয়ে দিয়েছে।’
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, এখন গার্মেন্ট শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। ব্যবসা চলে যাবে পাশ্বর্বর্তী দেশে। পোশাক শিল্পের মালিকরা বলছেন, এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্তে ধ্বংস হয়ে যাবে অর্থনীতির প্রধান শক্তি-এই শিল্প। এই খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের পথে বসে যেতে হবে। কোনো প্রকার পূর্ব আলোচনা ছাড়া হঠাৎ এ রকম একটি সর্বনাশা সিদ্ধান্ত এই শিল্পকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করবে।
তিনি বলেন, 'ডামি সরকার' নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দেশের অধিকাংশ মানুষের দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। দেশে এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য দু’টিই ডামি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অপরদিকে 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' এর মতো জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে বিপর্যস্ত দেশের কৃষি ও শিল্পখাত। বোরো আবাদের এই ভরা মওসুমে বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে কৃষকরা চরম হতাশার মধ্যে পড়েছে।
রিজভী বলেন, লুটপাট আর দুঃশাসনের কারণে লাগামহীনভাবে বেড়েছে সকল পণ্যের দাম। দেশের এখন সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতি এবং দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি আর সবচেয়ে মূল্যহীন গণতন্ত্রকামী জনগণের মতামত। গণতন্ত্রকামী জনগণের পেছনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশেষ অংশকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। একদিকে হামলা মামলা নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে, গুম খুন অপহরণ করে ভিন্ন দল ও মতের মানুষকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সম্মুখে ঝোলানো হয়েছে মৃত্যুর খাঁড়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, অধ্যাপক ডাঃ আবদুল কুদ্দুছ, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন
- অটোরিকশাচালকদের ওপর সরকার স্টিম রোলার চালাচ্ছে : রিজভী
- আওয়ামী লীগ পরগাছায় পরিণত হয়েছে : জিএম কাদের
- তাহলে ব্যাংকে কি মাস্তান-মাফিয়ারা ঢুকবে : কাদেরকে রিজভী
- আওয়ামী সরকার দেশে নব্য বাকশালী শাসন কায়েম করেছে : মির্জা ফখরুল
- নতজানু বলেই জনগণের স্বার্থে যে স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার
- সরকারের লোকদের লুটপাটের খবর একের পর এক বের হতে শুরু করেছে : রিজভী
- ঋণ করে রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার : নজরুল ইসলাম খান
- আ'লীগ সরকারের কারণে জনগণ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত : মির্জা ফখরুল