বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও কৃষির সংযোগ; প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কৃষি ভাবনা
বিডি প্রেস ডেস্ক রিপোর্ট শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫ ০৫:২১ পিএম | আপডেট: শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫ ০৬:১০ পিএম
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ শুধু একটি রাজনৈতিক মতবাদ নয়, বরং এটি একটি জাতীয় আত্মপরিচয়ের প্রতিফলন; যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং মানুষের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে সম্মান জানানো হয়। এই দর্শনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল দেশের মাটি ও মানুষ, যার ভিত্তিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটি আত্মনির্ভরশীল, মর্যাদাসম্পন্ন ও উৎপাদনক্ষম বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি কৃষিকে জাতীয় অর্থনীতি ও স্বাধীনতা রক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক যিনি কৃষিকে জাতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেওয়া কর্মসূচি ও দৃষ্টিভঙ্গির ফলে বাংলাদেশ একটি খাদ্যঘাটতির দেশ থেকে ধীরে ধীরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, দরিদ্র এবং খাদ্যঘাটতির রাষ্ট্র ছিল। কৃষি ছিল তখনও দেশের বৃহত্তম কর্মসংস্থান খাত, কিন্তু উৎপাদন ছিল অপ্রতুল এবং কৃষক ছিল অবহেলিত। শহীদ জিয়াউর রহমান প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে কৃষক ও কৃষিকে স্থাপন করেন। তাঁর দর্শনে স্পষ্ট ছিল— “কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, কৃষি এগোলে বাংলাদেশ এগোবে।” এই ধারণা সরাসরি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে দেশের নিজস্ব সম্পদ, জনগোষ্ঠী ও সংস্কৃতিকে নির্ভরযোগ্য শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যা বাইরের নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব উৎপাদনশীলতা ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান জাতি গঠনে উৎসাহিত করে। এই লক্ষ্য অর্জনে কৃষির উন্নয়ন ছিল অপরিহার্য। তাই জিয়াউর রহমান সেচ, উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণায় অভূতপূর্ব বিনিয়োগ করেন। গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন ও বেসরকারি মালিকানায় তা পরিচালনার অনুমতি, খাল খনন ও পুনঃখননের উদ্যোগ, সেচযন্ত্র আমদানির সুযোগ বৃদ্ধি ও শুল্কে ছাড়ের ব্যবস্থা করেন তিনি। কৃষি ব্যাংক ও কৃষিঋণ সুবিধায় তিনি ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ চালু করে, কৃষি ব্যাংক পুনর্গঠনের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে ঋণ বিতরণ জোরদার হয় করে প্রান্তিক কৃষকদের অগ্রাধিকার দেন তিনি। সার, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রে সরকারিভাবে ভর্তুকি দিয়ে প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বীজ সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। এর জন্য তিনি কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন।
মাঠপর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নিয়োগ ও কৃষি বিষয়ক পাঠ্যক্রমকে আধুনিকীকরণ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নের দিকে নজর দেন যার সুফল আজও পাচ্ছে বাংলাদেশ। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, কাঁচা রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ সহজ করেন যার ফলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পেতে শুরু করে। BARI, BRRI, BINA-এর মতো কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে তিনি বিশেষ নজর দেন এবং জলবায়ু উপযোগী নতুন জাত উদ্ভাবনের গবেষণায় উৎসাহ যোগান যাতে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যায়। তিনি “সবুজ বিপ্লব”কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামে-গ্রামে কৃষির বিজ্ঞানভিত্তিক রূপান্তর ঘটান, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেই এগিয়ে যায়।
এসব উন্নয়ন শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, বরং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মর্যাদা, আত্মবিশ্বাস ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এনে দেয়, যা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলে থাকা “নিজস্বতাবোধ” ও “জনগণের ক্ষমতায়ন”-এর সঙ্গে একাত্ম।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, শহীদ জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদ গ্রাম-নগরের বৈষম্য কমিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের কথা বলে। তার কৃষি-কেন্দ্রিক উন্নয়ন দর্শনের মাধ্যমে তিনি শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনেন দেশের প্রকৃত ভিত্তি— গ্রামীণ জনগণের দিকে। তিনি একদিকে যেমন কৃষিতে আধুনিকতা ও বিজ্ঞানকে যুক্ত করেন, অন্যদিকে কৃষকদের সামাজিক মর্যাদাও নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও কৃষির মধ্যে একটি অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক রয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দর্শনে কৃষি কেবল খাদ্য উৎপাদনের খাত নয়, বরং জাতীয় স্বকীয়তা, আত্মনির্ভরতা এবং স্বাধীন অস্তিত্বের এক শক্তিশালী প্রতীক। কৃষি ও কৃষককে সম্মান ও গুরুত্ব দিয়ে তিনি যে উন্নয়ন পথ রচনা করেছিলেন, তা আজও বাংলাদেশের উন্নয়নচিন্তার মৌলিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তার “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ” ছিল মূলত দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং এই দায়বদ্ধতার সবচেয়ে বাস্তব প্রকাশ ঘটেছিল কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে।
লেখক:
আবু ফাহাদ
লেখক ও সাংবাদিক
আরও পড়ুন
- হাসিনা পালিয়ে দিল্লিতে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক তলানিতে
- "প্রথম বাংলাদেশ-আমার শেষ বাংলাদেশ"
- ভারতের ৪৯ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর প্রচার
- ভারতের গোলামি করার জন্য স্বাধীনতা অর্জন করিনি : সোহেল তাজ
- সত্যের সৌন্দর্য হলো, ষড়যন্ত্রের ওপর বিজয় লাভ করে : তারেক রহমান
- অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান তারেক রহমানের
- ওই আসছেন তারেক রহমান
- তারেক রহমানের সুশৃঙ্খল নেতৃত্বেই নিরাপদ আগামীর বাংলাদেশ