1. »
  2. রাজনীতি

এবার উপজেলা আ'লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল

শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০৭:৪৪ পিএম | আপডেট: শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০৭:৪৪ পিএম

এবার উপজেলা আ'লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল

বরগুনার তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা, দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পর এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাতে এ ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়।

পরপর উপজেলার চারজন উঁচু পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। এতে দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। তবে ভিডিওটি ক্লিপটি এডিট করা বলে দাবি করেছেন রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার।

জানা গেছে, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু মিয়া এক তরুণীর বিরুদ্ধে মোবাইলে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে গত ১২ এপ্রিল তালতলী থানার পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেন। এতে ওই তরুণী এবং তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকিরকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় বরগুনা ডিবি পুলিশ ওই তরুণী ও তার সহযোগীকে গত শুক্রবার গ্রেফতার করে। ওই মামলার দুই আসামি বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন।

ওই তরুণী জেল হাজতে যাওয়ার পরপরই তার সাথে তালতলী উপজেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়। তাদের আপত্তিকর ভিডিও মানুষের মোবাইল ফোনে ফোনে। চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ নেতার এমন কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।

এর রেশ কাটতে না কাটকেই শুক্রবার রাতে তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

১৬ সেকেন্ডের আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপে তাকে ওই তরুণীর সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন ভিডিও প্রান্তিক মানুষের মোবাইল মোবাইলে। এ ভিডিও নিয়ে তারা ট্রল করছেন।

উল্লেখ্য, তালতলী উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন মিঠুর ওই তরুণীর সাথে ২০২৩ সালে অক্টোবর মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে তারা এক পর্যায়ে প্রেমে পড়েন। প্রেমের সুবাদে ওই তরুণীকে মিঠু একাধিকবার ধর্ষণ করেন। তিনি গোপনে ওই তরুণীর আপত্তিকর ভিডিও-ও ধারণ করেন।

ওই ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে মিঠু ওই তরুণীকে প্রথমে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. কামরুজ্জামান বাচ্চুর কাছে পাঠান এবং তিনিও ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন।

এরপর পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে ওই তরুণীকে পাঠান মিঠু। ওই চেয়ারম্যানও তাকে ধর্ষণ করেন এবং স্বেচ্ছায় ভিডিও ধারণ করেন।

এরপর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিঠু ওই তরুণীকে ভিডিও ক্লিপ ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের কাছে পাঠান। তিনিও ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। নিরুপায় হয়ে তাদের হাত থেকে রক্ষায় ওই তরুণী সুকৌশলে তাদের এমন কর্মকাণ্ডের ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ভিডিও ক্লিপ তিনি জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকিরের কাছে গচ্ছিত রাখেন। এমন দাবি তরুণীর নানার।

কিন্তু ওই ছবি হোয়াসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ভাইরাল হয়। এতে বেকায়দায় পড়ে যান ছাত্রলীগ নেতা মিঠু, দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু, রাজ্জাক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার। পরে তারা নিজেদের নিরাপদ রাখতে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ১২ এপ্রিল পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেন।

কিন্তু তাদের সেই প্ল্যান ভণ্ডুল হয়ে যায়। একের পর এক বেড়িয়ে আসে ওই তরুণীর সাথে ধারণ করা ভিডিও।

ওই তরুণীর নানা বলেন, ‘আমার নানতির মায়ের সাথে ওর বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় যখন ওর বয়স দুই বছর। এরপর বিভিন্ন চড়াই-ওৎড়াইয়ের মাধ্যমে আমার নাতনি বড় হয়েছে। গত ঈদের দুই দিন আগে নাতনি আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে। তারপর ঈদের দিন দুপুর আড়াইটায় ডিবি পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ৮২ ঘণ্টা পরে পুলিশ আমার নাতনিকে আদালতে সোপর্দ করেন। এত সময় আমার নাতনি কোথায় ছিল কেউ জানে না? এরও তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।’

তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ গ্রুপ আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে এক তরুণীর এডিট করা ভিডিও দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা এমন ঘৃণিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।’

তালতলী থানার ওসি কাজী শহিদুল ইসলাম খাঁন বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, ‘সঠিক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।’

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দলের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা: রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’