1. »
  2. খেলার মাঠ

২৪ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ইতিহাস লিখলেন জকোভিচ

মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৩:০০ পিএম | আপডেট: মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৬:৪২ পিএম

২৪ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ইতিহাস লিখলেন জকোভিচ

সার্বিয়ান সুপারস্টার নোভাক জকোভিচ ইউএস ওপেন জিতলেন। আরেকটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন। ইউএস ওপেনের এক ঘণ্টা ৪৪ মিনিটের ফাইনালে রাশিয়ান তারকা ২৩ বছর বয়সী দানিল মেদভেদেভকে হারিয়েছেন ৬-৩, ৭-৬ (৭-৫) ৬-৩ গেমে। এই ফাইনালেও টাইব্রেক হয়েছিল। 

জকোভিচের ফাইনালের ক্যারিয়ারে পর পর দুই সেট জয়ের ফাইনাল ম্যাচে এখনো কেউ তাকে হারাতে পারেনি। কালও পারল না। ফাইনালে একটা সময় জকোভিচেকে দেখা গেছে র‍্যাকেট হাতে হাঁটু গেড়ে বসে গিয়েছিলেন। পায়ে টান লেগেছিল। 

বিশ্রাম নিয়ে আবার লড়াইয়ে নামেন তিনি। ফাইনালে একবার পড়ে গিয়েছিলেন মেদভেদেভ। জকোভিচ নেট টপকে গিয়ে মেদভেদেভকে হাত বাড়িয়ে উঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেদভেদেভ হাত বাড়াননি। মনে হলো যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি না মেদভেদেভ।

২০২১ সালের ইউএস ওপেনের ফাইনালে জকোভিচ হেরেছিলেন মেদভেদের কাছে। এবার সেই জকোভিচ প্রতিশোধ নিয়েছেন। কী অসাধারণই না খেললেন। সার্বিয়ান সুপারস্টারের ফ্ল্যাশিং মেজাজ টেনিস দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন। পুরো কোর্ট দাপিয়ে বেড়ানো জকোভিচের ক্ষিপ্রতা দেখে মনে হয়েছে যেন এক তরুণ টেনিস তারকা দৌড়াচ্ছেন।

টেনিস দুনিয়ার প্রশ্ন ৩৬ পেরনো এই তারকা এখনো কীভাবে টেনিস কোর্ট মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন। সার্বিয়ানরা উত্তরটা দিয়েছেন এভাবে, ‘ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালোদরা কীভাবে এখনো ১২০ গজের ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেভাবে ছুটে চলেছেন নোভাক জকোভিচ। 

ডানহাতের র‍্যাকেট তলোয়ারের মতো চলে। সাঁইসাঁই করে র‍্যাকেট চালান। প্রতিপক্ষকে ঘাম ছুটিয়ে দিচ্ছেন জকোভিচ। 

এই তারকা ২৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে টেনিস কিংবদন্তি মার্গাটে কোর্টকেও স্পর্শ করে ফেললেন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মহিলা টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামসকেও ছাপিয়ে গেলেন। ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।

চতুর্থবার ইউএস ওপেন জিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন জকোভিচ। কোর্টে দাঁড়িয়ে র‍্যাকেট হাত থেকে ছেড়ে দেন। 

হাঁটু ভেঙে নিচে বসে নীরব হয়ে যান, এরপরই মায়ের কাছে ছুটে যান। জকোভিচকে চেয়ারে বসিয়ে তার মা ডিজানা জকোভিচ আদরের সন্তানের ভিজে যাওয়া শরীরের ঘাম মুছে দিলেন। এমন ছবি দেখে ফাইনালের দর্শকও আবেগ-আপ্লুত।

ফাইনাল শেষ করে পুরস্কার নিতে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন জকোভিচ রুশ তারকা মেদভেদেভদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন। ইউএস ওপেনের ফাইনালের দিনে মেদভেদেভের বিবাহ বার্ষিকী ছিল। চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিবাহবার্ষিকী রাঙিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। 

কিন্তু ২৩ গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ী জকোভিচের কাছে হার মানতেই হয়েছে। জকোভিচ পুরস্কার গ্রহণ করতে গিয়ে মেদভেদেভের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সরি মেদভেদেভ। তোমার বিবাহবার্ষিকীর দিনে হারতে হলো। আমি যদি জানতাম আজ তোমার বিবাহবার্ষিকী, তাহলে আমিও চাইতাম ফাইনালটা তুমি জিতে নাও।’ 

ফাইনালের এই আনন্দের প্রতিপক্ষের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে করতে মুহূর্তেই জকোভিচ সিরিয়াস মুডে তার প্রয়াত বন্ধু কিংবদন্তি বাস্কেটবল খেলোয়াড় কোবি ব্রায়ান্টের কথা স্মরণ করলেন। শ্রদ্ধা জানালেন। ২০২০ সালে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে বন্ধু ব্রায়ান্টকে বহনকারী হেলিকপটার গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ব্রায়ান্ট ৪১ বছর বয়সে মারা যান। 

ব্রায়ান্টের ছবি আঁকা এবং ২৪ খেলা একটি জার্সি গায়ে পরেন জকোভিচ। বললেন, ‘ব্রায়ান্ট আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। আমি যখন ইনজুরিতে তখন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ব্রায়ান্ট। ওর কথা আমি ভুলব না।’

প্রশ্ন উঠল জকোভিচ অবসর নেবেন কবে? ‘অবসরের প্রশ্নটা আমি প্রায় নিজেই নিজেকে জিগ্যেস করি। এত সাফল্যের পর আর কেন আমি টেনিস খেলব। আর কত দিনই বা আমি এগিয়ে যাব। এমন অনেক কথাই আমার মাথায় উঁকি দেয়। 

সত্যি কথা বলতে কি, আমি খেলাটা ছাড়তে চাই না। এখনো আমি সেরা জায়গায় আছি। ফাইনালের আগে আমি আমার পরিবারকে বলেছিলাম কেউ আমার সঙ্গে কথা বলো না। আমাকে স্পর্শ করো না। আমি জানতাম একটা ইতিহাসের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছি এখান থেকে ফিরে আসতে চাই না। জয় পেতেই হবে।’ 

জকোভিচের মা ডিজানা বলেছেন, ‘আমার ছেলে আর কত দিন টেনিস খেলবে— সেটা নির্ভর করছে ওর নিজের ওপর। চাইলে এখনই সে টেনিস ছেড়ে দিতে পারে। বড় জোর আর দুই এক বছর খেলবে।’