1. »
  2. রাজনীতি

বিএনপি ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান

সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:৪৩ এএম | আপডেট: সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:৪৩ এএম

বিএনপি ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জনগণ তখন নতুন দিক নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিল। বিএনপি সেই শূন্যস্থান পূরণে আত্মপ্রকাশ করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক জীবনে কোনো দল কেবল কারো প্রতিনিধি সংগঠন নয়; তা একটি দেশের দর্শন, সমস্যা সমাধান ও রাষ্ট্র-চিন্তার প্রতিফলন। এই দিক থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও তার প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাবনা-চিন্তা বিশ্লেষণ করা জরুরি, বিশেষত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে, যখন অতীত স্মরণ ও ভবিষ্যৎ নীতি নিয়ে আলোচনা দুটোই সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’কে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক কাঠামো দাঁড় করান। স্বাধীনতার পরবর্তী অস্থির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজনৈতিক শক্তি, প্রশাসনিক পুনর্গঠন ও উৎপাদনমুখী নীতির প্রয়োজনেই জাতির ক্রান্তিলগ্নে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারী নেতৃত্ব ও নারীর ক্ষমতায়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খুবই আন্তরিক ছিলেন। তাইতো বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাত্র ৯ দিনের মাথায় ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী মহিলা দল প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু থেকেই জিয়াউর রহমানের প্রাথমিক নীতির একটি স্পষ্ট দিক ছিল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে জনগণের অর্থনৈতিক-সামাজিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচিতে কৃষি, স্থানীয় সরকার, প্রশাসনিক সংস্কার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়; এগুলো রাজনৈতিক আবহাওয়ার অনুকূলে নীতিমূলক দিকনির্দেশনা হিসেবে আজও প্রাসঙ্গিক।

বিএনপি আজ দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এর পেছনে বিএনপির বর্তমান চেয়ারপারসন ও তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা আলাদা গুরুত্ব পায়। শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পর তিনি দলকে সুসংগঠিত করে জাতীয় রাজনীতির মূল ধারায় রেখেছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচন এবং পরবর্তী গঠনমূলক কাজগুলোর মধ্যে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বিশেষত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও দলকে স্থিতিশীল রাখা এসব কৃতিত্ব দেশের অগ্রগতির ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে থাকবে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নারী অধিকার ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে কিছু নীতিগত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা গুণগত ক্ষমতায়নে রূপান্তরিত হয়েছে।

বিগত ১৭ বছরে পিছিয়ে পড়া দেশকে এগিয়ে নিতে এবং ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকাঠামোকে মেরামত করার লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে প্রস্তাবিত ৩১ দফা কর্মসূচির মধ্যে সংবিধানগত সংস্কার, নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গড়ার মতো দিকসমূহ উঠে এসেছে। ৩১ দফা এক ধরনের আধুনিকায়ন ও প্রতিষ্ঠান শক্ত করার রূপরেখা দেয়, কিন্তু এই রূপরেখা কার্যকর করার জন্য সময়সীমা, বাস্তবায়ন কৌশল ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রয়োজন। আজ এই ৩১ দফা কর্মসূচি জাতির মুক্তির সনদে পরিণত হয়েছে।

জিয়াউর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নতুন পথ উন্মুক্ত করেন। তাঁর ঘোষিত ১৯ দফা ও পরবর্তীতে ২১ দফা কর্মসূচিতে কৃষি, শিক্ষা, শিল্পায়ন, দুর্নীতি দমন ও সমতাভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে কৃষিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে প্রায় ৪ শতাংশে পৌঁছায়, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতার পথও তখন থেকেই সুদৃঢ় হতে শুরু করে।

বেগম খালেদা জিয়ার গণতান্ত্রিক সংগ্রাম
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান হত্যার পর বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে পড়ে। তখন বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির মঞ্চে আসেন। তিনি সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে বিএনপির নেতৃত্বে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, শিক্ষা ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে দেশ ৬ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সর্বোচ্চ ছিল।

 

লেখিকা : সুলতানা রহমান দিনা

আরও পড়ুন