1. »
  2. রাজনীতি

অজ্ঞাত লাশের কঙ্কাল উদ্ধার, নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা শামীমের লাশ দাবি পরিবারের

রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:৪৮ এএম | আপডেট: রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:৪৮ এএম

অজ্ঞাত লাশের কঙ্কাল উদ্ধার, নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা শামীমের লাশ দাবি পরিবারের

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় অজ্ঞাত লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশের মাংস ও পরিহিত কাপড় পচে যাওয়ায় পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তবে প্রায় তিন মাস আগে নিখোঁজ হওয়া ছাত্রদল নেতা শামীমের লাশ বলে দাবি করছেন তার পরিবার।

গতকাল শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় লাশের কঙ্কাল উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেন কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান। 

এর আগে শনিবার বিকেলে উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের মনকান্দা গ্রামের বিল থেকে লাশের কঙ্কালসার উদ্ধার করা হয়।

স্হানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের মনকান্দা গ্রামের মোঃ আক্কাস মিয়ার ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শামীম(৩০) গত ৩ জুলাই রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। ওইদিন রাত আনুমানিক ১২টা ৩০ মিনিটে শামীম নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে বের হন। এরপর থেকে তার সঙ্গে পরিবারের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।নিখোঁজের পরদিন ৪ জুলাই কেন্দুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার স্বজনরা। পরে শনিবার (৫ জুলাই) রাতে রফিকুল ইসলাম শামীমের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি পার্শ্ববর্তী গইচাসিয়া ব্রীজের নিচে উদ্ধার করে পুলিশ। শামীমের কোনো খোঁজ পাওয়া না গেলেও, মোটরসাইকেল উদ্ধারের ঘটনায় এলাকাবাসীর ও তার পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ ও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। আজ শনিবার বিকেলে মনকান্দা বিলে মাছ ধরতে গিয়ে এক ব্যক্তি কঙ্কালটি দেখতে পেয়ে ডাক চিৎকার দেন। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে কঙ্কালটি উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয় থানা পুলিশ। 

নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা শামীমের পরিবার জানায়, স্থানীয় মনকান্দা এম ইউ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এএমএন মহিবুল্লাহ এবং সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলামসহ অন্য শিক্ষকদের মধ্যে দুটি পক্ষ হয়। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে সংশিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তর গত বছরের ৪ অক্টোবর থেকে অধ্যক্ষকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব প্রদান করে। এ নিয়ে এএমএন মহিবুল্লাহ উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হলে গত ২৪ মার্চ থেকে তিনি আবারো দায়িত্ব নেন। দুই শিক্ষকের রিরোধের জের ধরে গ্রামে দুটি পক্ষ হয়। মহিবুল্লাহের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সাবেক ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম শামীম। আর সাইফুল ইসলামের পক্ষে রয়েছেন মোস্তফা কামাল। বিবাদমান শামীম ও মোস্তফা একে অপরের প্রতিবেশী এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিরোধের জেরে গত ৮ জুন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ কয়েকজন আহত হন। ওই ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যেই মামলা হয়। গত ১৪ জুন মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে রফিকুল ইসলাম শামীমকে প্রধান করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আর শামীমের চাচা ওয়ালী উল্লাহ বাদী হয়ে ২০ জুন মোস্তফা কামালকে প্রধান করে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। 

পরিবারের অভিযোগ, মামলায় গ্রেপ্তার ভয়ে শামীম, তাঁর দুই ভাই ও চাচাসহ আসামিরা সটকে থাকেন। গত ৩ জুলাই বুধবার রাতে রফিকুল বাড়ি এসে খাবার খেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি কোথাও নেই। পুলিশও তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে গত ৪ জুলাই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। ৫ জুলাই শনিবার রাত নয়টার দিকে শামীমের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি স্থানীয় মাইজহাটি- আঠারোবাড়ি সড়কের গইচাসিয়া সেতুর নিচে পানি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তাঁর কোন সন্ধান মেলেনি। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যসহ স্বজনরা উদ্বিগ্ন ছিলেন।

রফিকুলের স্ত্রী নাজমা আক্তার কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘মাদ্রাসার বিরোধ নিয়া গ্রামে দুইডা পক্ষ হইছে। এ নিয়া হামলা-মামলা চলতেছিল। প্রায় তিন মাস ধইরা আমার স্বামীর কোন খোঁজ নাই। তাঁর মোটরসাইকেল ব্রিজের নিচে পানিতে পাওয়া গেছে। নিখোঁজের সপ্তাহখানিক আগে বাড়িত আইয়া প্রতিপক্ষের লোকজন অস্ত্রের মহড়া দিয়া কইয়া গেছে আমার স্বামীরে আর জীবিত রাখতো না। তাঁরে গুম কইরালবো। আজকে বিল থেকে যে কঙ্কাল উদ্ধার হইছে এইটা আমার স্বামীর। প্রতিপক্ষের লোকজন তারে খুন কইরা গুম কইরা রাখছিল। আমি আমার স্বামীর হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ বিচার চাই।’ 

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান  জানান, মনকান্দা বিল থেকে একটি লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট ছাড়া পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব নয়। নিখোঁজ শামীমের পরিবারের দাবি থাকলেও আমরা রিপোর্ট আসার আগে কিছু বলতে পারছি না।