আইনশৃঙ্খলার অবনতি, খুলনায় বাড়ছে খুন, চাঁদাবাজি
বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ ০৬:২৬ পিএম | আপডেট: বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ ০৬:২৬ পিএম

খুলনা নগরীতে খুন, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও লুটপাটের ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ধাওয়া-পালটাধাওয়া, গোলাগুলি, হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংঘটিত হচ্ছে। আত্মসমর্পণ করা ‘দুলাভাই বাহিনী’সহ অন্তত ১৪টি গ্রুপ ৫ আগস্টের পর ফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড জড়িয়ে পড়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যে এসব সন্ত্রাসীবাহিনীর অত্যাচারে খুলনার মানুষ সবসময় চরম আতঙ্কে থাকেন।
অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির কারণেই এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হচ্ছে। তথ্যানুযায়ী, গত ১০ মাসে খুলনা মহানগরীতে ২৭টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে, যা নগরবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
সাম্প্রতিক ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর আগেরদিন ২৩ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি কর্মী মন্টু শেখের চোখ ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীর গুলিতে জিয়া প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইকরাম হাওলাদারকে জখম করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বার শাহওনেয়াজ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের মালিক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইনঞ্জিনিয়ার একেএম শাহনেওয়াজকে একদল সন্ত্রাসী হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। এতে অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেচে যান।
এর আগে ৯ জানুয়ারি চরমপন্থীদের পরিকল্পনায় কক্সবাজারে পরিকল্পিতভাবে খুন হন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) ৪ নং ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর গোলাম রব্বানি টিপু। প্রতিনিয়ত ঘটা এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খুলনা বিএনপি। শিমুল ভুঁইয়ার ও তার ভাই শিপলু ভুঁইয়া গ্রুপ এসব অপরাধ কর্মকান্ডের জড়িত বলে অভিযোগ আছে। সারাদেশে এদের গ্রুপ থাকায় এরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম সহ নানান অপকর্মেও সাথে জড়িত। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী গ্রুপের অত্যাচারে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, এফ আর জুট মিলস, শাহনেওয়াজ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট, কবির ট্রেডিং।
বিএনপি নেতাদের উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ: মহানগরীর চরম আইন-শৃঙ্খলা অবনতি নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনা বিএনপির নেতারা। বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন চরম অবনতির দায় কোনভাবেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এড়াতে পারে না।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্টে পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও খুলনার পুলিশ এখনো পুরোপুরি সক্রিয় হয়নি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন পলাতক থাকা ও কারামুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। নগরীতে কিশোর গ্যাং সদস্যদের বেপরোয়া আচরণেও জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উদ্বিগ্ন নগরবাসী: খুলনায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। খুলনার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, খুন, অস্ত্রের মহড়া, চুরি, ডাকাতি ও লুটপাটের মতো ঘটনা খুলনায় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতি রাতেই মগানগরসহ জেলার কোথাও না কোথাও ঘটছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি ও খুনসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম। গত পাঁচ মাসে পুলিশ প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। একের পর এক হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
নগরবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনায় জামিনে মুক্তি পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটছে। ক্রমেই বাড়ছে খুনের ঘটনা। বাড়ছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। সর্বত্রই চলছে ওপেন চাঁদাবাজি ও অবৈধ দখলযজ্ঞ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কমে যাওয়ার কারণে সন্ত্রাসীরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। অপরাধ দমনে বিভিন্ন থানা পুলিশের মনোযোগেও ভাটা পড়েছে। কেন এমনটা ঘটছে তাও অনেকটা রহস্যাবৃত।
আরও পড়ুন
- শুটিংয়ের কথা বলে রিসোর্টে নিয়ে ধর্ষণ, আটক ১৮
- সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান গ্রেপ্তার
- বুড়িগঙ্গা থেকে নারী-শিশুসহ ৪ জনের লাশ উদ্ধার
- চার স্কুল ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ, শিক্ষক গ্রেপ্তার
- উপদেষ্টা আসিফের সাবেক এপিএসের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- সাবেক আইনমন্ত্রীর ‘বান্ধবী’ তৌফিকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়
- প্রতিবন্ধী ছেলেকে সেতু থেকে ফেলে দেন মা: পুলিশ
- আ'লীগ নেতা সাবেক এমপি কাজী নাবিলের দৌরাত্ম্য